চমেক’য়ে হামলার শিকার কুমিল্লার মেধাবী সন্তান আকিবের অবস্থা সংকটাপন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ(চমেক) হাসপাতালে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ঘে গুরুতর আহত কুমিল্লার মেধাবী সন্তান মাহাদি জে আকিব (২১) এর অবস্থা সংকটাপন্ন। প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় আইসিইউ’তে চিকিৎসাধীন। হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়েছে মাথা। যার কারণে ভেঙে গেছে হাড়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এই অবস্থায় অপারেশন করে মস্তিষ্কের কিছু অংশ তার শরীরের মধ্যে সংরক্ষণ রেখেছেন চিকিৎসকরা। মাথায় দেওয়া ব্যান্ডেজে লিখে দেওয়া হয়েছে, ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না’।

কুমিল্লা জেলা স্কুলের ২০১৭ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র আকিব চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার পিতার মো. ফারুক কুমিল্লা জিলা স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক। আকিব ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়। সে চমেকের এমবিবিএস ৬২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার জের ধরে শনিবার সকাল ১০টার দিকে মেডিক্যাল কলেজের মূল গেট সংলগ্ন এলাকায় হামলার শিকার মাহাদি জে আকিবের মাথায় অস্ত্রোপচার শেষে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

গতকাল রবিবার রাত ৮ টায় আকিবের বাবা ফারুক আহম্মেদ কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, অস্ত্রোপাচার শেষে আকিবের জ্ঞান ফিরেছে। তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে সবচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সবটুকু নির্ভর করছে মহান আল্লাহর উপর। আমার ছেলের জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই।

আকিবের মাথায় ‘হাড় নেই’, চাপ দিতে বারণ

কুমিল্লার মেধাবীমুখ মাহাদি জে আকিব (২১)। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় আইসিইউ’তে চিকিৎসাধীন।

হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়েছে মাথা। যার কারণে ভেঙে গেছে হাড়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এই অবস্থায় অপারেশন করে মস্তিষ্কের কিছু অংশ তার শরীরের মধ্যে সংরক্ষণ রেখেছেন চিকিৎসকরা। মাথায় দেওয়া ব্যান্ডেজে লিখে দেওয়া হয়েছে, ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না’।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে শনিবার (৩০ অক্টোবর) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মাহাদি গুরুতর আহত হন। এরপর তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷

জানা গেছে, শনিবার সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেইন গেটের পাশে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে মাহাদির ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের এক পক্ষ। এ সময় তারা দেশিয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে তাকে। হামলায় মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন মাহাদি। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতারা তাকে ফেলে চলে যায়। পরে সহপাঠীরা এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অপারেশন শেষে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুল কাদের বলেন, ‘মাহাদি জে আকিবের অস্ত্রোপচার হয়েছে। মাথার হাড় ও মস্তিষ্কে ইনজুরি আছে’।

চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় মাহাদিকে ভর্তি করা হয়। তার মাথা থেঁতলানো ছিল, হাড় ভেঙে গেছে, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এই অবস্থায় অপারেশন করে মাথার কিছু অংশ শরীরের মধ্যে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। আমরা সফল অপারেশন করেছি। আশা করি, মাহাদি সুস্থ হয়ে উঠবে।

এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরকারী ৫৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌফিকুর রহমান বলেন, শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি থেকে মারামারি হয়। পরে অধ্যক্ষ উভয়পক্ষ থেকে ৪ জন করে ৮ জনকে তার কক্ষে ডাকেন। আমরা ওখানে যাই। আলাপ চলাকালেই ক্যাম্পাসের বাইরে এক পক্ষের জুনিয়ররা মাহাদির ওপর হামলা চালায়। পরে আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মাহাদিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছি।

তিনি আরও বলেন, ছুরি ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাতের ফলে মাহাদির মাথায় আঘাত লেগেছে। তাই প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। শনিবার রাতেই তার অপারেশন হয়েছে। রোববার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকে চেতনা ফিরেছে। তবে এখনও কথা বলার অবস্থা তৈরি হয়নি।

মাহাদির বাড়ি কুমিল্লায়। তার পিতার নাম মো. ফারুক। ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন বলে জানিয়েছেন সহপাঠীরা। তিনি এমবিবিএস ৬২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। আকিব মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ নেতা নাইমুল মোস্তফা আকাশ রবিবার বিকেলে ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান,“ আলহামদুল্লাহ । আকিবের জন্য বসা মেডিকেল বোর্ড শেষ হয়েছে।তার অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। হাত,পা মুভমেন্ট করছে আকিব। আলহামদুলিল­াহ! কথা ও বলছে আকিব।”

কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে সদ্য বদলী হওয়া সহকারী শিক্ষক দেবরাজ ঘোষ ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, “ আমার সহকর্মী, প্রিয় স্যারের সন্তান, হয়তো নিজের সন্তান আছে, তাই বার বার চোখ ভিজে ওঠে, দোয়া চাই সবার।”

এদিকে, মৃত্যুপথযাত্রী আকিবের উপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল রোববার চমেকে প্রতিবাদী মানববন্ধ করেছে তার সহপাঠিরা। তারা আকিবের উপর হামলায় জড়িতদের কঠিন শাস্তি দাবি করেন। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় দুই ছাত্রলীগ কর্মীর পাঁচ দিন করে রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের জামিন আবেদনও নামঞ্জুর করা হয়েছে।

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

You cannot copy content of this page